শিশুদের সামনে যে ১০টি কাজ করা উচিৎ নয়ঃ
আমরা প্রত্যেক বাবা-মা ই চাই যে আমাদের সন্তান ভালো চরিত্রের অধিকারী হোক। শিশু চরিত্রবান হওয়ার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা অপরিসিম। শিশুরা ছোটবেলা থেকে যে পরিবেশের মধ্যে বড় হয়ে উঠবে শিশুর মধ্যে সেই পরিবেশের চরিত্র গুলোই তার মধ্যে প্রতিয়মান হবে। কারন শিশুরা সবসময় অনুকরণ প্রিয় হয়ে থাকে। শিশু যেমন দেখবে সে তাই শিখবে। বড়দের যা করতে দেখবে সে সেই কাজ করার চেষ্টা করবে।
অভিভাবকদের উচিৎ শিশুদের সামনে অত্যান্ত সাবধানতার সাথে, বুঝে-শুনে চিন্তা করে কথা বলা ও তাদের সঙ্গে সেভাবে ব্যবহার করা। আপনি যে কাজটি শিশুর সামনে করবেন, সেই কাজটি শিশুর জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকে। কিছু কিছু কাজ শিশুদের কোমল হৃদয়ে অত্যান্ত গভির ভাবে গেথে থাকে, পরবর্তিতে শিশু সেই কাজ গুলো করতে আগ্রহী হয়। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিশুদের সামনে বিভিন্ন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবেই আপনার শিশু উত্তম চরিত্রের আধিকারী হবে।
শিশুদের সামনে যে কাজ গুলো করা মোটেও উচিৎ নয়, সে রকম ১০টি কাজ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১। সন্তান যখন বুঝতে শিখবে তখন তার আশেপাশে স্বামী-স্ত্রী সহনশিলতা বজায় রাখুন। শিশুর সামনে এমন কোনও কাজ করা থেকে বিরত থাকুন, যা তাদের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে বা ভুল বুঝতে শেখায়।
২। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রত খুব বিরক্ত হলে বা রেগে গেলেও শিশুর সামনে কখনই চিৎকার-চেচাঁমেচি করবেন না। বরং মেজাজ ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন। সন্তানের সামনে চিৎকার-চেচাঁমেচি করলে সে মনে করতে পারে এই ব্যবহারই সঠিক।
৩। শিশুর সামনে কাউকে অপমান করবেন না। আপনি যদি কাউকে শিশুর সামনে অপমান-অপদস্ত করেন তাহলে তা শিশুর উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি কাউকে অপছন্দ করলে সেই ক্ষোভ শিশুর সামনে দেখাবেন না। কারণ আপনি যেটা করবেন শিশুও সেটা শেখার চেষ্টা করবে।
৪। অনেক মা আছেন যারা সারাক্ষন ফোন অথবা টিভি নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন এবং শিশুর প্রতি নজর কম দেন। আপনি যদি এমন ভাবে সময় কাটান তবে শিশুও আপনার মতোই এইভাবে সময় কাটাতে চাইবে। এ কারণে টিভি ও ফোনের পিছনে কম সময় ব্যয় করুন।
৫। শিশু যখন বোঝার মতো হয়ে উঠবে তখন তাকে খাবারের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝান। শিশুর পেছন পেছন খাবার নিয়ে ছুটবেন না বা খাবারের জন্য জোর করবেন না। ক্ষুধা পেলে শিশুকে নিজের হাতে খেতে শেখান। শিশুকে খাবার নষ্ট করা থেকে নিরুৎসাহিত করুন এবং নিজেও খাবার অপচয় করা থেকে বিরত থাকুন।
৬। শিশুদের সামনে অন্য কারোর গায়ের রং অথবা চেহারা নিয়ে কোনো প্রকার বিরুপ-খারাপ মন্তব্য করবেন না। বাবা-মা অথবা পরিবারের করোর কাছ থেকেই যদি শিশুরা এসব ভেদাভেদ শিখে, তাহলে শিশু বড় হলেও এর প্রভাব থাকতে পারে তার মনে।
৭। শিশুদের সামনে কখনই ধুমপান ও অন্যান্য নেশা করবেন না। এগুলো যদি করতেই হয় তাহলে শিশুর থেকে আড়ালে গিয়ে করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি এসবে অভ্যস্ত থাকেন তাহলে আপনি নিজেও এগুলো পরিত্যাগ করার চেষ্টা করুন। আপনার শিশুকে এ ধরনের অ-স্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে সুশিক্ষা দিতে হবে এবং তাদেরকে সব পরিস্থিতিতেই এইসব থেকে দূরে রাখতে হবে।
৮। আপনার শিশুর সামনে কখনই পশু পাখিদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না। আপনার শিশুকে ক্ষতিকর পশুদের থেকে দূরে থাকতে এবং পোষা প্রাণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে শিক্ষা দিন। শিশুদের টিভিতে পশুপাখিদের শো এবং ডকুমেন্টারি দেখানোর চেষ্টা করুন। এতে সে নিজেই বুঝতে পারবে কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ।
৯। শিশুদের সামনে হাতের কাছে ময়লা আবর্জনা, যেমন- খালি পানির বোতল, কাগজের ন্যাপকিন প্রভৃতি যেখানে সেখানে ফেলবেন না। ময়লা নির্দ্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। আপনার শিশু এটা দেখে সেও এটা শিখবে এবং শিশুও পরিচ্ছন্ন থাকবে।
১০। শিশুদের অতিরিক্ত কোনো কিছুই দিবেন না। যদি শিশু অতিরিক্ত কিছু পায় তাহলে সে অপচয় করবে। যেটা তার প্রয়োজন শুধুমাত্র সেটা দেওয়ার চেষ্টা করুন। কোনো কিছু অপচয় না করার জন্য শিশুকে পরামর্শ দিন।
“আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ” সে কথা মাথায় রেখে শিশুদের সাথে ব্যবহার করুন। আর বাবা-মায়ের কাছ থেকে যেহেতু শিশু প্রথমিক শিক্ষাটা পায় সেহেতু বাবা-মাকে একথা স্বরনে রেখেই শিশুকে ভালো আচার-ব্যবহারের শিক্ষা দিতে হবে। শিশু সন্তান হওয়ার পর বাবা-মায়ের নতুন কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই শিশুর ভালো আচার-ব্যবহারের প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন “বাবা এবং মা”।